বিমান দুর্ঘটনার পর সমন্বয়হীন সিদ্ধান্তে উত্তাল রাজধানী: উপদেষ্টা অবরুদ্ধ, বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা

সিবি ডেক্স: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি পদক্ষেপে সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহির অভাব জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

দুর্যোগের পরের দিন মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল থেকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্কুল ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

সরকারি সিদ্ধান্তের সমন্বয়হীনতায় ক্ষুব্ধ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা রাজধানীজুড়ে সড়ক অবরোধ, সচিবালয়ে অনুপ্রবেশ, গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা, যা শিক্ষার্থীরা অনেকেই জানার আগেই কেন্দ্রে রওনা দিয়েছিলেন—এই ঘটনায় ক্ষোভ আরও তীব্র আকার নেয়।

অপরদিকে, নিহতদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রকাশে বিলম্ব এবং প্রথম থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ তথ্য না দেওয়া গুজব ও বিভ্রান্তিকে উসকে দেয়।
তথ্য অধিদপ্তর বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা না দিলেও, আইএসপিআর নিহতদের নাম, বয়স ও অভিভাবকের নামসহ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এর বাইরে সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, যা বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট তৈরি করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয় ‘শতাধিক লাশ গুম’ হওয়ার গুজব, যার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এর পরও সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও জোরালোভাবে তা খণ্ডন না করায় জনমনে উদ্বেগ ও সন্দেহ বাড়ে।

এদিকে, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়—পরীক্ষা স্থগিত হবে না, কিন্তু রাত ৩টায় তথ্য উপদেষ্টার এক ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়—পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে, মঙ্গলবার সকাল ৭টার আগে পরীক্ষার্থীরা কোনো সরকারি নোটিশ না পেয়েই রওনা দেন কেন্দ্রের দিকে, পরে তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।

শুধু দুর্ঘটনা নয়, চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়েও আতঙ্ক ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। গুজব রয়েছে, “এইচএসসির খাতা কঠিনভাবে দেখা হবে, জিপিএ ৫ কমবে”— এমন প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছে। এসএসসি ফলাফলের মতো বিভ্রান্তিকর বাস্তবতায় এই গুজবের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা একাধিক দাবিতে আন্দোলন করছে, যার মধ্যে রয়েছে:

নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ

পরীক্ষার সময়সূচি ও সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা

দায়িত্বশীল উপদেষ্টাদের পদত্যাগ

গুজব প্রতিরোধে সরকারি তথ্যপ্রবাহ জোরদার

দগ্ধদের দ্রুত পরিচয় নিশ্চিত করে মরদেহ হস্তান্তর

এবং আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা


সরকারি পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এসব দাবির কোনোটির সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না আসায় বিক্ষোভ আরও বিস্তৃত রূপ নিচ্ছে।

বিষয়টি এখন শুধুমাত্র একটি বিমান দুর্ঘটনার পরিণতি নয়, বরং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক জবাবদিহির সংকটের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেশের নানা প্রান্তে তরুণদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments