সিবি ডেক্স: ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার শহর–খুরুশকুল সংযোগ সেতু এখন যেন এক ভূতুড়ে স্থাপনা। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছিল দর্শনার্থীদের নতুন গন্তব্য। তবে উদ্বোধনের এক সপ্তাহের মধ্যেই রাতের আলোকবাতি খুলে নিতে হয়েছে—চোর আর ছিনতাইকারীর তাণ্ডব ঠেকাতে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো লাগানো যায়নি বাতিগুলো।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর এলজিইডি জানিয়েছে, চালুর প্রথম সপ্তাহেই বহু বাল্ব চুরি করে নেয়া হয়। এরপর চোরের দল পিলার খোদাই করে মূল্যবান তারগুলোও নিয়ে যায়। ফলে রাতের বেলা সেতুতে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। নিরাপত্তা না থাকায় বাতিগুলো আর লাগানো যাচ্ছে না। এমনকি পিলারে তার লাগালেও আবার চুরির শঙ্কা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ডিজাইনের জন্য সেতুটি চালুর পরপরই স্থানীয় ও দূরদূরান্তের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিকাল নামতেই নানা বয়সের মানুষের মিলনমেলায় মুখর থাকে সেতুর দুই পাশে। কিন্তু সূর্য ডুবতেই ভর করে ভয়। সন্ধ্যার পর কেউ সেখানে থাকতে চায় না—কারণ তা অপরাধীদের রাজ্যে পরিণত হয়।
স্থানীয়রা জানান, রাত নামলেই সেতুর চারপাশে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তারা দলবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়, মাদক সেবন করে, ছিনতাই চালায়। জরুরি প্রয়োজনে হেঁটে পার হতে গেলেও অনেকেই জিম্মি হয়ে সর্বস্ব খুইয়েছে। সেতুজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য আবু আদনান সাউদ বলেন, “এই সেতু খুলে দিয়েছে জেলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দরজা। কিন্তু রাতের অন্ধকার সে সম্ভাবনাকে আড়াল করে দিচ্ছে।” গণমাধ্যমকর্মী শাহাদাত হোসাইন বলেন, “অন্ধকারকে পুঁজি করে অপরাধীরা এই সেতুকে অপরাধকেন্দ্রে পরিণত করেছে।”
তবে কিছুটা আশার কথা জানিয়েছে এলজিইডি। কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, “বাতিগুলোর নিচে তার লাগানো গেলে আবার চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখন আমরা উপরে লাইন টেনে বিকল্পভাবে আলো দেওয়ার প্রকল্প জমা দিয়েছি। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।”
এখন প্রশ্ন—চুরি, ছিনতাই আর অন্ধকারে ঘেরা এই ‘অপূর্ব’ সেতু আদৌ কাকে কাজে দিচ্ছে?
0 Comments