“ভাইয়া, আমাকে ধরে রাখো”— বিধ্বস্ত বিমানের আগুন ছুঁয়ে গেল কক্সবাজারের ছোট্ট আলবীরার জীবন, লড়ছে বার্ন ইউনিটে

সিবি ডেক্স: সময় তখন দুপুর। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় চলছিল নিয়মিত ক্লাস। মিলেছিল স্কুল ছুটির আগ মুহূর্তের প্রশান্তি। ঠিক তখনই আকাশ থেকে আগুনের গোলা হয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হলো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে। মুহূর্তেই চারদিকে আতঙ্ক, ধোঁয়া, কান্না আর বিভীষিকাময় দৃশ্য।

এই ভয়াল মুহূর্তে স্কুল ভবনের ভেতরে ছিল ১০ বছরের রুবাইদা নূর আলবীরা, কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন ও নাহিদা ইসলাম দম্পতির বড় মেয়ে। সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আগুন আর ধোঁয়ার মধ্যেই যখন সবাই ছোটাছুটি করছিল, অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছিল, তখন আলবীরা একজন সিনিয়র ছাত্রের হাত ধরে বলেছিল, “ভাইয়া, আমাকে ধরে রাখো, আমি পড়ে যাচ্ছি।” ছোট্ট কণ্ঠের সে অনুরোধই হয়তো তাকে ফিরিয়ে এনেছে জীবনের দিকে। ভয়াল সেই মুহূর্তে জ্ঞান হারায়নি সে—জীবনের জন্য লড়ে গেছে শিশুসুলভ সাহস নিয়ে।

দুর্ঘটনায় তার শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যায়, মুখেও আসে গভীর ক্ষত। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে তাকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকরা তার হাতে অস্ত্রোপচার করেন, মুখেও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।

চিকিৎসকদের মতে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে, আলবীরা এখন শঙ্কামুক্ত। সে বর্তমানে ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

আলবীরার বাবা জসিম উদ্দিন বলেন,
“আমার মেয়ে আজ বেঁচে আছে আল্লাহর অশেষ রহমতে। যে সাহস ও বুদ্ধি সে দেখিয়েছে, তাতে আমি গর্বিত। শুধু দোয়া চাই, যেন সে আগের মতো হাসতে পারে, স্কুলে যেতে পারে।”

পড়াশোনায় ভালো, শান্ত স্বভাবের আলবীরার জন্য এখন প্রার্থনায় কাঁদছে কক্সবাজারের মানুষ, সহপাঠী আর আত্মীয়স্বজন। সবাই বলছে—“এই মেয়েটি যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। যেন ওর মুখে সেই চেনা হাসি ফুটে ওঠে।”

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের জন্য যেমন কান্না থামছে না, তেমনি আলবীরার বেঁচে যাওয়াকে দেখছে অলৌকিক আশীর্বাদ হিসেবে।

Post a Comment

0 Comments