দরিয়ানগরের বড়ছড়া সংকটে পরিবেশ

কক্সবাজারের দরিয়ানগর এলাকার বহুজীবনী জলধারা ‘বড়ছড়া’ একসময় পাহাড়ি ঢল ভাগ করে নেওয়া, বর্ষার বাড়তি পানি দ্রুত সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া এবং আশপাশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ছিল অপরিহার্য। বর্ষায় গর্জে ওঠা এ ছড়াটি এখন দখল–ভরাট ও পরিকল্পনাহীন ব্যবসা–বসতির চাপে অস্তিত্ব হারানোর মুখে।

স্থানীয়দের মতে, গত ১২ থেকে ১৫ বছরে বড়ছড়ার প্রাকৃতিক প্রবাহ অর্ধেকেরও বেশি সংকুচিত হয়েছে। যেখানে আগে ছিল দ্রুতগামী পানির ধারা, সেখানে এখন দোকানঘর, টিনশেড, এমনকি স্থায়ী কংক্রিটের ভবন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গেছে। প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল আলীম বলেন, “এই ছড়াই ছিল এলাকার প্রাণ। বর্ষায় পানি নামার একমাত্র পথ ছিল বড়ছড়া। এখন এত স্থাপনা হয়ে গেছে যে পানি নামতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকা ডুবে যায়।”

প্রাকৃতিক জলপথ দখলের কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়ছে। পরিবেশবিদদের মতে, একটি ছড়া নষ্ট হয়ে গেলে পাহাড়ি ঢল প্রতিরোধের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ে; বাড়ে ভূমিধসের আশঙ্কা। স্থানীয় পরিবেশ গবেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, বড়ছড়া দখল অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ভবিষ্যতে পুরো দরিয়ানগর অঞ্চলই বন্যা–ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হতে পারে। তাদের ভাষায়, “প্রতি বছর বর্ষায় পানি নেমে যাওয়ার গতি কমছে। ছড়ার গভীরতা–প্রস্থ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঢল সোজা বসতবাড়ির দিকে ধেয়ে আসে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মাঝে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান হলেও তা টেকসই হয়নি। কিছু অবৈধ স্থাপনা ভাঙার পর অল্পদিনের মধ্যেই আবার নতুন কাঠামো গড়ে ওঠে। একসময় বড়ছড়ার চারপাশ ছিল মাছ–চিংড়ি, ব্যাঙ, ছোট প্রাণী ও নানা কীটপতঙ্গের আবাসস্থল; ছিল লতা–গুল্ম আর ঝোপঝাড়ে ভরা সমৃদ্ধ বাস্তুসংস্থান। দখল–ভরাটের কারণে সেই জীববৈচিত্র্য এখন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী পর্বে থাকছে: বড়ছড়া দখলের নেপথ্যের শক্তি, প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা এবং স্থায়ী সমাধানের পথ।

Post a Comment

0 Comments