ছয় লেন দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ রবিবার

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ককে দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করার দাবিতে রবিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলন’। বহুদিন ধরে “মরণফাঁদ মহাসড়ক” হিসেবে পরিচিত এই পথে প্রতিদিনের দুর্ঘটনা, স্থায়ী যানজট ও জনদুর্ভোগ চরমে ওঠায় সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা একই দাবিতে একত্র হয়েছেন।

ব্লকেড কর্মসূচি সফল করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে আলোচনা–পরামর্শসভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা দীর্ঘদিনের ভয়াবহ যানজট, দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত সংকট তুলে ধরে দ্রুততম সময়ে ছয় লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

তারা বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানসহ তিন জেলার কোটি মানুষের জীবনরেখা এই মহাসড়ক এখন মৃত্যু–ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বহু প্রাণহানি, অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হওয়ার পরও উন্নয়ন প্রকল্প বারবার অনুমোদন পর্যায়েই আটকে আছে—রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক ধীরগতি ও টেন্ডার জটিলতার কারণে প্রকল্প সামনে এগোয়নি।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি জাবেদ বলেন, “এটা শুধু সড়ক উন্নয়ন নয়—দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁচা–মরার প্রশ্ন। আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। এবার শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নেমে দাবি জানাতেই ব্লকেড।”

রবিবারের কর্মসূচিতে সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এবং চকরিয়ার মাতামুহুরি ব্রিজ এলাকাসহ ব্যস্ততম পয়েন্টে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে মানবিক বিবেচনায় অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদেশগামী (এয়ারপোর্টমুখী) গাড়ি, পরীক্ষার্থী, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী যান ও জরুরি সরকারি সেবার গাড়ি ব্লকেড–মুক্ত থাকবে।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে তামিম মির্জা বলেন, “দ্রুত ছয় লেন বাস্তবায়ন ও মহাসড়ক সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি ফিটনেসহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা কমবে না। নাগরিকের রক্ত ঝরছে, মানুষ মরছে—তারপরও শুধু আশ্বাসে সমাধান হবে না। এবার দৃশ্যমান পদক্ষেপ চাই।”

ব্লকেডকে ঘিরে কেরানীহাট, লোহাগাড়া ও চকরিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। অধিকাংশ মানুষই কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “২০ মিনিটের পথ ১ ঘণ্টা লাগে। রাস্তায় উঠলেই ভয়—ফিরব তো? উন্নয়ন খুব জরুরি।”
এক ট্রাকচালক জানান, “দুর্ঘটনা দেখেই বড় হয়েছি। সড়ক প্রশস্ত না হলে সমাধান সম্ভব নয়।”
কেরানীহাট ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি হামিদ বলেন, “এক দিনের ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে উন্নত মহাসড়ক হলে প্রতিদিনের ক্ষতি কমবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, ব্লকেড যাতে জনদুর্ভোগ না বাড়ায়, সে বিষয়ে প্রশাসন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

Post a Comment

0 Comments