চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত শত শত পরিবার হঠাৎ শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরবাড়ি ভাঙা চলছে। কিন্তু আগে থেকে কোনো লিখিত নোটিশ, আলোচনা কিংবা পুনর্বাসনের উদ্যোগ না থাকায় প্রায় সাড়ে চার শ পরিবার মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। ঘরহারা এসব মানুষ শীতের রাতে রাস্তায়, খোলা জায়গায় কিংবা ভাঙা ঘরের সামনে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে বৈরাগ ইউনিয়নের মেরিন একাডেমি থেকে শাহাদাত নগর পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। নারী–পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ কয়েকশ মানুষ অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন—হঠাৎ উচ্ছেদ করে তাদের অজ্ঞাত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হান্নান বলেন, তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছেন। “প্রথমে ২৯ ফুট জায়গা খালি করতে বলা হয়েছিল—আমরা মান্য করেছি। কিন্তু হঠাৎ পুরো বাড়ি ছাড়তে বলা হলো। নোটিশ নেই, আলোচনা নেই। উন্নয়ন হবে—ভালো কথা, কিন্তু মানুষ বাঁচবে কীভাবে?”—বললেন তিনি।
অন্য ভুক্তভোগী কুনসুমা বেগম বলেন, “৩০ বছর ধরে এখানে আছি। একদিন আগে মাইকিং করে যেতে বলল। কোনো সময়ই দিল না। শীতের মধ্যে রাস্তায় পড়ে আছি। আমাদের তো অন্য কোথাও জমি নেই। অন্তত থাকার ব্যবস্থা করুক।”
এ বিষয়ে সওজ দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী–মেরিন একাডেমি সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে সিইউএফএল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। “এখানে স্থানীয়দের ব্যক্তিগত জমি নেই, তাই পুনর্বাসন আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়”—মন্তব্য করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী বর্ণ হক জানান, উচ্ছেদ বিষয়ে সওজ পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি তারা পাননি। ভুক্তভোগীদের কথা জেনে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, উন্নয়নকাজে তারা বাধা নন; তবে পুনর্বাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করলে জীবন-জীবিকায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে। তাই পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ স্থগিত রাখার আহ্বান জানান তারা।
0 Comments