চট্টগ্রাম সীমান্তে বিজিবির বড় সফলতা

চট্টগ্রাম রিজিয়নের বিস্তৃত সীমান্ত এলাকায় মাদক, চোরাচালান, গবাদিপশু পাচার ও অন্যান্য অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চলতি মাসে বিভিন্ন অভিযানে মোট ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পানছড়ি ব্যাটালিয়ন (৩ বিজিবি) আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ও লোগাং জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. রবিউল ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের আমতলী থেকে রাঙামাটির জুরাছড়ির কচুতলী পর্যন্ত প্রায় ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা চট্টগ্রাম রিজিয়নের আওতায়। ১৩টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক প্রতিরোধ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মানবিক সেবায় প্রতিনিয়ত কাজ করছে।

চলতি মাসে পরিচালিত অভিযানে চারজন আসামিসহ মোট ৬,৩১,৮২,৫৭৫ টাকার মালামাল জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, গবাদিপশু ও বিভিন্ন চোরাচালানী পণ্য। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে ৪৭৭ বোতল বিদেশি মদ, ৪২৯ পিস ইয়াবা, ৩৮৮.৩১ কেজি গাঁজা, ২০০ বোতল বিয়ার ও বাংলা মদ তৈরির ৫২০ পিস ট্যাবলেট আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশি খামারিকে সুরক্ষা ও সরকারি রাজস্ব রক্ষায় ৫০১টি গরু এবং ৩৬টি ছাগল জব্দ করে শুল্ক কার্যালয়ের মাধ্যমে নিলাম দেওয়া হয়েছে।

আটক করা অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে—১৯,৩১,২৯৩ ঘনফুট মূল্যবান কাঠ, ৩২১০ প্যাকেট বিদেশি সিগারেট, ১১,৫১,২০০ পিস সিগারেট ফিল্টার, ৯২০ কেজি রাবার, ৯৫টি শাড়ি, ১,৭৮৫ প্যাকেট আতশবাজি, ৩০৮ লিটার কীটনাশক, ১৫ কেজি জিরা, বিভিন্ন কসমেটিকস, ৪,৫০০ ভারতীয় রুপি ও ১৭টি যানবাহন।

সীমান্ত সুরক্ষা বাড়াতে গুইমারা সেক্টরের ছোটফরিংগা বিওপি সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে সীমান্ত টহল ও দ্রুত নিরাপত্তা হস্তক্ষেপ আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি জানায়, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত ১১০ জন বিজিবি সদস্য শহীদ হয়েছেন।

সাম্প্রতিক খাগড়াছড়ির সহিংসতায় বিজিবি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও সংযম দেখিয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল রবিউল ইসলাম। খাগড়াছড়ি সদর, গুইমারা ও রামগড় এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিজিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বিজিবি শুধু নিরাপত্তা নয়, সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে। চলতি মাসে ১০০৬ জনকে আর্থিক অনুদান, ১৯ পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণে ঢেউটিন, ৪৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান, পুলিশ ক্যাম্পে টয়লেট নির্মাণ, ১৮ জনকে সেলাই প্রশিক্ষণ, ৫৯০ জনকে শীতবস্ত্র, দুই মেডিক্যাল ক্যাম্পে ৭৪৪ জনকে চিকিৎসা ও ওষুধ, ২১ জনকে কৃষি উপকরণ এবং ২৩০২ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। এসব মানবিক কার্যক্রম সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও আস্থা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

গুইমারার জালিয়াপাড়া বাজারে ৫ অক্টোবরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডেও বিজিবি, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এক ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অধিনায়ক বলেন, “আপনারা জাতির আয়না। তথ্যভিত্তিক দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা সীমান্ত নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে আমাদের বড় সহায়ক।”

Post a Comment

0 Comments