১০ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আরিয়ান গুরুতর দগ্ধ হয়ে বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে। তার ৬০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে। মা আঁখি আক্তারের কান্নায় হাসপাতাল এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বাপ্পি সরকারের শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে, বাবা শাহীন সরকার রক্তের খোঁজে দৌড়াচ্ছেন হাসপাতালের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন, তাদের একজন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নাহিদ হাসান। নাতিকে হারিয়ে জাতীয় বার্ন ইউনিটের সামনেই রাস্তায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদা মোসলেম উদ্দিন, বললেন:
“আজরাইলে নিছে আমার কলিজার টুকরারে।”
সপ্তম শ্রেণির উক্যছাইন মারমা ভর্তি আছেন সপ্তম তলার আইসিইউতে, তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজিয়া, নাফিজ, জুনায়েদ—যাদের জন্য আহাজারি করছেন স্বজনরা।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাহসিনা ৩৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি আছেন পঞ্চম তলার ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবা নাজমুল হক উৎকণ্ঠায় ছুটে চলেছেন রক্ত ও ওষুধের খোঁজে।
এদিকে নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তালিকাও দীর্ঘ। তৃতীয় শ্রেণির তিন শিশু ওয়াকিয়া আহমেদ নিধি, আফিয়া উম্মে সায়মা ও শামীমার খোঁজ মেলেনি। নিধির বাবা ফারুক হোসেন ও ভাই আসাদ হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরে এখন প্রায় পাগলপ্রায়। শামীমার দাদা হারুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওর বাবা-মা কেউ নাই। আমি ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নাই ওর।”
আফিয়া সায়মার খালাতো বোন মুন্নী বলেন, “বই-খাতা সব পড়ে আছে ক্লাসে, কিন্তু সায়মা নেই। বার্ন ইউনিটেও নেই, মর্গেও খুঁজেছি।”
শ্রেয়া ঘোষ, তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী, শরীরের ৮ শতাংশ পুড়ে চিকিৎসাধীন। তার মা পপি ঘোষ জানান, স্কুল ছুটির পর মেয়েকে আনতে এসে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখা। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর পা জড়িয়ে ধরে মেয়েকে বাঁচানোর আকুতি জানান তিনি।
স্কুলের ‘প্রজেক্ট-২’ নামের ভবনটিতে ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস। দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোচিং চলছিল ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।
সোমবার রাত পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন ৪৬ জন—তাদের ৪০ জনই শিক্ষার্থী। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ১৬০ জন, তার মধ্যে ২৩ জন এখনো ভর্তি।
এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি শুধু শরীর নয়, ভেঙে দিয়েছে পরিবার, ভবিষ্যৎ আর স্বপ্ন—সবই এখন পোড়া গন্ধে আচ্ছন্ন।
0 Comments