বিদ্যালয়টিতে মোট ৬টি শিক্ষকের পদের মধ্যে ৪টি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শূন্য পড়ে আছে। এমনকি প্রধান শিক্ষকের পদও নেই। বর্তমানে কেবল দুজন শিক্ষক—মোহাম্মদ তাহের ও মুহাম্মদ নুরুল হুদা—এই বিশাল দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তাহের দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় মূল পাঠদানের পুরো চাপ পড়ে যাচ্ছে নুরুল হুদার উপর। ফলে শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত কমছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে ৫০০-এর বেশি শিক্ষার্থী ছিল, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ২১৮ জনে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে বিভিন্ন সংখ্যায়—প্রথম শ্রেণিতে ১৫ জন থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণিতে ৮০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৬৫ জন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, “শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অভিভাবকরা। অনেকেই শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না।” ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, সামর্থ্যবান পরিবারগুলো টেকনাফ বা কক্সবাজার শহরে সন্তানদের পাঠালেও দরিদ্রদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। ফলে অনেক শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বীপে এটাই একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও কিছু নুরানি মাদরাসা রয়েছে, তা সাধারণ শিক্ষার বিকল্প হতে পারছে না।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষকরা কিছুদিন পর বদলি হয়ে যান। আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আরজু জানান, “সমস্যার মূলে রয়েছে সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর জটিলতা। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দ্বীপে যেতে আগ্রহী হন না।”
এই দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে সেন্টমার্টিনের শিশুদের শিক্ষা অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
0 Comments