চকরিয়ায় চিংড়ি এস্টেটের দখল সংকট

রফতানিমুখী চিংড়ি শিল্প গড়ে তোলার উচ্চাভিলাষ নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপকূলে প্রতিষ্ঠিত সরকারি চিংড়ি এস্টেট বর্তমানে অনিয়ম, দখল ও দুর্নীতির পরিণত চিত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৯ সালের সিদ্ধান্তের পর ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ৭ হাজার একর বনভূমি অধিগ্রহণ করে স্থানীয় প্রকৃত চাষীদের মধ্যে প্লট আকারে হস্তান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল চিংড়ি উৎপাদন বাড়ানো, রফতানি বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করা।

কিন্তু বাস্তবে এ বিশাল প্রকল্প অধিকাংশই চলে গেছে সরকারি আমলা, তাদের স্বজন, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। এতে করে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে এবং সম্ভাবনাময় এলাকা রয়ে গেছে অপরিকল্পিত ব্যবহারের মধ্যে।

২০১৩ সালের নতুন নীতিমালায় অঞ্চলটিকে ১০ ও ১১ একরের প্লটে ভাগ করে স্বচ্ছ যাচাই-বাছাই ও লটারির মাধ্যমে স্থানীয় ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ হাজার একরে ৪৬৮টি এবং ২ হাজার একরে ১১৯টি প্লট তৈরি হলেও বাস্তবে প্রকৃত চাষীরা সুযোগ পাননি। বরং আমলাতান্ত্রিক প্রভাব, রাজনৈতিক সম্পর্ক ও স্থানীয় ক্ষমতাবলে বরাদ্দ নিয়েছে নতুন একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী।

ফলে বরাদ্দকৃত প্লটগুলোতে চিংড়িচাষের পরিবর্তে চলছে লবণ উৎপাদন, মৌসুমি মাছ চাষ, ইটভাটা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড। নীতিমালা অনুযায়ী প্লট ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি নিষিদ্ধ এবং পরিবেশ দূষণে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান থাকলেও মাঠপর্যায়ে কার্যকর তদারকি নেই।

এ অবস্থায় বাঁধ নির্মাণ, রাসায়নিক ব্যবহার ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে এলাকার লবণাক্ততা বাড়ছে এবং স্থানীয় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। যদিও এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি, মৎস্য অফিস, ৬০ কিলোমিটার নতুন বাঁধ, ৩ লাখ গাছ রোপণ এবং ২৩টি স্লুইসগেট নির্মাণসহ কিছু উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পের মূল লক্ষ্য আজও অধরাই।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জানান, চিংড়ি এস্টেট একসময় যুগান্তকারী প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে বরাদ্দ জটিলতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতায় কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। ইজারার মেয়াদ ২০৩০ সালে শেষ হবে। এরই মধ্যে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এলাকা পরিদর্শন ও চাষীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন—সরকার যৌক্তিক সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চিংড়ি উদ্যোক্তাদের দাবি, বিশ্ববাজারে এখন ভেনামি চিংড়ির রাজত্ব। ভারত অন্ধ্রপ্রদেশকে চিংড়ি জোন ঘোষণা করে সফলভাবে ভেনামি চাষ করছে। চকরিয়ার সাত হাজার একর জমিও ভেনামি চাষের জন্য আদর্শ অঞ্চল—তাই সরকার চাইলে এখানেও রফতানিমুখী আধুনিক চিংড়ি হাব গড়ে তোলা সম্ভব।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এমএ মান্নান বলেন, চকরিয়ার চিংড়ি ঘের নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলা থাকায় নতুন কোনো উপকূলীয় জমি বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। আগের ইজারা করা প্লটগুলোর বিষয়ে সরকার এখনো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

Post a Comment

0 Comments