গোপনে জামিন শীর্ষ সন্ত্রাসী দম্পতির!

চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না চারটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও সেই তথ্য প্রায় আড়াই মাস গোপন রাখা হয়। পুলিশের একটি অংশ, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা এবং সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে জামিন কার্যকরের প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিক সূত্র থেকে।

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ছোট সাজ্জাদ অন্তত ১০টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৯টি মামলার আসামি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের আলোচিত জোড়া খুন, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক ভয়াবহ অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের একটি প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নার বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যা মামলাসহ অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, তামান্না কেবল সহযোগী নন; বরং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং হুমকি-ধামকিতেও সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন।

হাইকোর্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় এবং একই দিনে পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাসহ তিনজনকে জামিন দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচলাইশ থানার মো. ফারুক ও আফতাব উদ্দিন তাহসীন হত্যা মামলাতেও একই বেঞ্চ তাদের জামিন দেন।

চারটি মামলাতেই বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন আদেশ দেন।

তবে ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর জামিন আদেশ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট আদেশে সহকারী রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর হয় যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর। এরপরও জামিননামা চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছাতে লেগে যায় প্রায় আড়াই মাস। শেষ পর্যন্ত ৮ ডিসেম্বর তা পৌঁছায়।

আইনসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই জামিননামা সংশ্লিষ্ট আদালত ও কারাগারে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে সময় নেওয়া হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হলে জামিন কার্যকর করা যায়।

আরও অভিযোগ রয়েছে, জামিন আবেদনে কৌশলগতভাবে চারটি মামলাতেই প্রথম আসামি হিসেবে তামান্নার নাম রাখা হয়, সাজ্জাদের নাম ছিল পরে। এতে নারী আসামির প্রতি আদালতের সহানুভূতি কাজে লাগানো এবং সাজ্জাদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী পরিচয় আড়াল করাই ছিল উদ্দেশ্য—মনে করছেন আইনজীবী মহলের একাংশ।

এদিকে হাইকোর্টের জামিনের পর ৫ নভেম্বর নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে। অভিযোগ ওঠে, কারাগারে থেকেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিলেন সাজ্জাদ।

এরপর প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ নভেম্বর সাজ্জাদকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং ১৮ নভেম্বর তামান্নাকে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৬টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে তিনটিতে জামিননামা এসেছে। তামান্নার চারটি মামলাতেই জামিননামা এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাজ্জাদের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, চারটি মামলাতেই তাঁর মক্কেল ও তাঁর স্ত্রী জামিন পেয়েছেন। তবে জামিননামা পৌঁছাতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

Post a Comment

0 Comments