এতে উপজেলা জুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ সাজানো অস্ত্র মামলায় সিএনজি চালক জাফর জেল খাটছেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও বাসস্টেশনস্থ আনু মিয়া সিকদার পেট্রোল পাম্পের সামনে গত ১৪ অক্টোবর ।
এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য হচ্ছে ঈদগাঁও থানার এসআই বদিউল আলম, ওসির বডিগার্ড খ্যাত কনেস্টেবল তানভীর ও মনির।
বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৪ অক্টোবর সকালে এক ব্যক্তি যাত্রী সেজে ঈদগাঁও বাসস্টেশনস্থ ঈদগড় সড়কের মাথা থেকে কক্সবাজার মুখী একটি সিএনজিতে উঠে । সিএনজি পেট্রোল পাম্পের সামনে পৌঁছালে যাত্রী চালককে একটি পানির বোতল আনতে পাঠায়। এ সুযোগে যাত্রীটি ব্যাগ ভর্তি কিছু বস্তু সিএনজিতে রেখে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের পোশাকধারী এক সদস্যকে কি যেন বলে পাশে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে পানির বোতল নিয়ে চালক এসে সিএনজিতে যাত্রীকে না পেয়ে এদিক সেদিক উঁকি দেয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা এসেই কোন রকম চার্জ ছাড়াই হাতকড়া পরিয়ে ব্যাগ থেকে অস্ত্রটি বের করে তার হাতে দিয়ে উপস্থিত লোকজনদের দেখিয়ে তাকে থানায় নিয়ে অস্ত্র মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করে।
এক কথায় পুলিশ কর্তৃক অস্ত্র দিয়ে চালককে ফাঁসানোর ভিডিও ফুটেজটি বাংলা ছবির অভিনয়কেও হার মানিয়েছে। পরে তখনকার অফিসার ইনচার্জ ফরিদা ইয়াসমিন (বর্তমান মিরসরাই থানা) সিএনজি চালকের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার বলে গণমাধ্যমকে তথ্য দেন।
এদিকে এ ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর এ প্রতিবেদক উপজেলার ইসলামাবাদ ইউপির পশ্চিম গজালিয়ার সিদ্দিক আহমদের পুত্র সিএনজি চালক জাফরের স্ত্রী'র সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন, তার স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়মিত আসা যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত স্থানীয় বাপ্পি ও রাসেল নামের দুই বখাটে। হঠাৎ একদিন পথে তার মেয়েদের প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করে এরা। এ ঘটনায় তিনি মামলা দায়ের করলে এক বখাটেকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এরপর থেকে বখাটের পরিবার ও তার প্রবাস ফেরত ভাইয়েরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকে। এমনকি তাদের এলাকা ছাড়া করারও হুমকি দেয়। ।
এক পর্যায়ে প্রভাবশালী দালালচক্রের মাধ্যমে বখাটের পরিবার থানার এসআই বদিউল আলম,কনেস্টেবল তানভীর ও মনিরের সাথে দুই লাখ টাকার চুক্তিতে তার নিরিহ সিএনজি চালক স্বামীকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে বখাটেদের বিরুদ্ধে ইভটিজিং মামলা ও জেলে হাজতে পাঠানোর প্রতিশোধ নেয়। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান।তিনি আরো দাবি করেন, তার স্বামী এ ষড়যন্ত্রমূলক অস্ত্র মামলায় জেলে যাওয়ায় পুরুষ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তাদের ঘরে একাধিকবার লুটপাট চালালেও তারা প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। তিনি এবং স্থানীয়রা এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে জড়িত ইভটিজার পরিবারের সদস্য, জড়িত পুলিশ ও মধ্যস্থতাকারী দালাল চক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এবং নিরিহ সিএনজি চালকের মুক্তি দাবি করেন। অনেকে আবার উক্ত ভিডিও ফুটেজে এসআই আশরাফ রয়েছে বলেও দাবি করছে।
চাঞ্চল্যকর এ ফুটেজ ভাইরালের বিষয়ে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম সিফাতুল মাজদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, গণমাধ্যম মারফত এ ঘটনাটি জেনেছেন, পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয় তা জানাবেন জানান।অভিযুক্তদের মোবাইলে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, উক্ত এসআই বদিউল আলম টেকনাফ থানায় কর্মরতকালীন নানা অপকর্ম জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
অপরদিকে কনস্টেবল তানভীর বিগত ওসি মছিউর রহমানের বডিগার্ড পরিচয়ে উপজেলা জুড়ে অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। যার ফলশ্রুতিতে উপজেলায় ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ তাদের পাপের বোঝা এতই ভারী হয়েছে যে দেরিতে হলেও প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীদের মুখোশ ভিডিও ফুটেজসহ ফাঁস হয়ে গেছে। সচেতন মহলের অভিমত পাপ বাপকেও ছাড়ে না,শুধু সময়ের অপেক্ষা।
0 Comments