প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগাঁও নদীতে স্হাপিত দুইটি রাবারড্যাম থেকে শুস্ক মৌসূমে উপজেলার ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ও পোকখালী রাবার ড্যাম থেকে এতদ এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর ধানক্ষেত ও সবজিক্ষেতে এ পানি দিয়ে চাষ করা হয়।
পোকখালী রাবার ড্যাম দুই সপ্তাহ আগে ফুলিয়ে ফসলি জমিতে পানি সরবরাহ শুরু হলেও ঈদগাঁও রাবার ড্যাম এখনো ফুলানো হয়নি।
জালালাবাদ পালাকাটার কৃষক আলা উদ্দীন বলেন, এক মাসেরও বেশী সময় আগে আমন ধান কেটে নেয়ার পর থেকে এখানকার শষ্যভান্ডার খ্যাত বিশাল বিলগুলো খালি পড়ে আছে। জালালাবাদের ধনকা বিল, চৌফলদন্ডী বিল, ইসলামাবাদ বিল ও আরো অন্যান্য বিলের উর্বর ফসলী জমিতে আসন্ন বুরো মৌসূমের জন্য এখনো পানি সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে চরম বিপাকে ঈদগাঁও’র ৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর ফসলি জমি, কৃষক ও কৃষিখাত। আসন্ন বুরোধান মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরীর সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার বর্গা চাষী কাউছার বৈদ্য বলেন, রামুর ঈদগড় থেকে সদরের পোকখালী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারব্যাপী ঈদগাঁও নদীর চরে চাষকৃত শত শত একর সবজিক্ষেতও এখন সেচের পানি সংকটে পড়েছে।
ঈদগাঁও, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামাবাদ, ভারুয়াখালী, চৌফলদন্ডী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে বিগত আমনধান মৌসুমের ধান কাটার পর আপাতত খালি হওয়া ধানক্ষেত থেকে টপসয়েল কাটার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ইটভাঁটা মালিকদের সাথে রাবার ড্যাম কর্তৃপক্ষ, স্কিম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের গোপন আতাঁতের অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষীরা।
টমটম ড্রাইভার এইচ এন আলম বলেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের লরাবাক, পালাকাটা ও ফরাজী পাড়া সংলগ্ন ধনকা বিলের ফসলী জমি থেকে রাতদিন মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ডাম্পার ট্রাক ও ডজন খানেক এক্সেভেটর দ্বারা এসব মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি রাতেও শক্তিশালী সার্চলাইট জালিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে এরা। স্হানীয় সন্ত্রাসী, চোর ডাকাত ও এলাকার মাস্তানদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট মাটি কাটা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলে জানা গেছে।
ঈদগাঁও মেহের ঘোনার ট্রাক্টর চালক আবদু ছালাম জানান, ধানক্ষেতে পানি প্রবাহের জন্য ঈদগাঁও রাবার ড্যাম না ফুলিয়ে এখনো নালাকাটার কাজ সম্পন্ন করেনি স্কীম কর্তৃপক্ষ।
ইসলামাবাদ সিকদার পাড়ার রিকশা চালক গিয়াস উদ্দিন আবু বলেন, রহস্যজনক কারনে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ফুলানো হচ্ছে না। এ সুযোগে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৮টি ব্রিকফিল্ডে এখন ফসলীজমি থেকে রাত দিন টপসয়েল কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিকরা।
গত রাতে সরেজমিন দেখা যায় জালালাবাদ ধনকা বিল, মধ্যম পোকখালী বিল ও ঈদগাঁও মাইজ পাড়ার ঝাঁইক্যা কাটা বিলের বিভিন্ন পয়েন্টেও ডজনখানেক শক্তিশালী এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ফসলী জমিতে পানি উঠলে এই মাটিকাটা সম্ভব হবেনা। তাই রাবার ড্যাম ফুলানো হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এলাকাবাসী জানান, বিভিন্ন কলাকৌশল ও মোটা অঙ্কের টাকায় চারদিক ম্যানেজ করে রাবার ড্যামের ফুলানো হচ্ছেনা। আর এতে চরম বিপদে পড়েছে ৭/৮ ইউনিয়নের সাড়ে পাঁচ হাজার একরের কৃষিখাত। এখনই বুরো চাষ শুরু করা না গেলে পরবর্তীতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সেচ সংকট হতে পারে। এতে আগামীতে বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে।
ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সেক্রেটারী শাহনেওয়াজ মিন্টু বলেন, রাবার ড্যাম থেকে শীঘ্রই পানি সরবরাহ করা হবে ।
পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজুল হক রুবেল বলেন বীজতলা তৈরীর সুবিধার্তে রাবার ড্যাম ফুলিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর কামরুজ্জামান কবির বলেন, রাবার ড্যাম থেকে পানি ছাড়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হবে।
0 Comments