চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের কারণে স্থানীয় শ্রমবাজারে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কম মজুরিতে কাজ করতে রাজি থাকায় নিয়োগকারীরা স্থানীয় শ্রমিকদের বদলে তাদেরকেই বেছে নিচ্ছেন। এতে জীবিকা নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন দিনমজুররা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন শুক্রবার রাতে পরিচালিত অভিযানে ২২ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে।
শনিবার সকালে কেরানীহাট কাঁচাবাজার এলাকায় দেখা যায়—স্থানীয় শ্রমিকদের সারিতে মিশে রয়েছে রোহিঙ্গা তরুণরা। অভিযোগ উঠেছে, ক্যাম্পের নজর এড়িয়ে তারা কম ভাড়ার বাসা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এতে শুধু শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে না, নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে।
স্থানীয় দিনমজুর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আগের মতো কাজ পাই না। ৫০০–৭০০ টাকার কাজ রোহিঙ্গারা ৩০০ টাকায় করে দিচ্ছে।’ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জাহেদুল ইসলাম জানান, কম বেতনেও তারা কাজ করায় স্থানীয় শ্রমিকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
স্থানীয়দের মতে, নির্মাণকাজ, কৃষিকাজ, ইটভাটা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো—সবখানেই রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাড়ছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মহসিন বলেন, ‘কম মজুরি শ্রমবাজারের স্বাভাবিক দর ভেঙে দিচ্ছে। এতে স্থানীয় শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন শুক্রবার রাতেই ছদাহা ও কেঁওচিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। ইউএনও খোন্দকার মাহমুদুল হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামছুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে সেনা ও আনসারের সহযোগিতায় নির্মাণকাজে যুক্ত ১০ জন এবং একটি ইটভাটা থেকে আরও ১২ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়। তাদের নির্ধারিত ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামছুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবৈধ কাজে লাগানো শ্রম আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি সৃষ্টি করে। নিয়মিত মনিটরিং চলছে।’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাতকানিয়ার কোনো ইটভাটা, কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা শ্রমিক নিয়োগ কিংবা বাসা ভাড়া দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
ইউএনও খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ইটভাটার মৌসুমে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগানোর প্রবণতা বাড়ে। সামনে জাতীয় নির্বাচন—কোনো অপব্যবহার যাতে না ঘটে, সে কারণেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, অবৈধভাবে শ্রমবাজারে সক্রিয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়মিত চলবে।
0 Comments