কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু আজ

সিবি ডেক্স: আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের আট বছর পূর্ণ হবে। ২০১৭ সালের ওই দিনে মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক জান্তার দমন–পীড়নের শিকার হয়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে উখিয়া–টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ লাখে। এতদিনে বিভিন্ন উদ্যোগ হলেও প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা ও প্রত্যাবাসনে টেকসই সমাধান খুঁজতে কক্সবাজারে বসছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে ২৬ আগস্ট উখিয়ার ইনানীতে সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে–ওয়াচ মিলনায়তনে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।

‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্যা হাই–লেভেল কনফারেন্স অন দ্যা রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ যৌথভাবে আয়োজন করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় জানিয়েছে, দেশি–বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিসহ অন্তত ৪০ দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেবেন। আলোচনায় থাকবে মানবিক সহায়তা, নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং টেকসই সমাধান।

২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম–অধিবেশনে মূল আলোচনা হবে, আর ২৬ আগস্ট অতিথিরা সরেজমিনে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা কঠিন। এ সম্মেলনে রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের বক্তব্য রাখতে পারবেন। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।”

এ সম্মেলনকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ১০৭ দেশের অংশগ্রহণে উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ঘিরে কক্সবাজারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সব বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

স্থানীয় আইনজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, “রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল কার্যকর রোডম্যাপ দিলে হয়তো শান্তি ফিরবে। সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।”

আট বছর ধরে স্থবির থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবার গতি পাবে কি না—সবকিছু নির্ভর করছে এ সংলাপের সাফল্যের ওপর।

Post a Comment

0 Comments