২০২৪ এর জুলাই যোদ্ধা শহীদ নুরুল আমিন: ঈদগাঁওয়ের দরিদ্র ঘরের ছেলেটি ইতিহাসে নাম লিখিয়ে গেল রক্ত দিয়ে

সিবি ডেক্স: ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ হারানো শহীদ নুরুল আমিনের নাম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ গেজেটে।
২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারির (অতিরিক্ত) গেজেটের ৭৬৭ নম্বরে তাকে “শহীদ” হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার।

নুরুল আমিন ছিলেন কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব গজালিয়ার ঢালার মুখ এলাকার দরিদ্র কৃষক ছৈয়দ নূরের অবিবাহিত ছেলে। জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা লেখা হয়েছে পাশের পশ্চিম গজালিয়া। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আমিন পরিবারে ছিলেন অন্যতম অর্থ উপার্জনকারী। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে কাজ করতেন বহুদিন ধরে। সেখান থেকেই সৌদি আরবে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছিলেন। পাসপোর্ট তৈরি করে কক্সবাজারে ফিঙ্গারপ্রিন্টও দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় চলমান আন্দোলনে হামলার শিকার হন নুরুল আমিন। পরিবারের দাবি, তাকে সন্ত্রাসীরা পাথর ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি গুলি ও শারীরিক নির্যাতন করে। এতে তার কিডনি, পেট ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় ছয় দিন তার পরিবার কোনো খোঁজ পায়নি। পরে ঈদগাঁও, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অবশেষে ৩০ জুলাই ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের ৩ জুলাই তার বড় ভাই মুসলেম উদ্দিন বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, যা নিয়ে পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

মরদেহ নিজ গ্রামে এনে সমাহিত করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন দাফন ও কবরস্থান তৈরিতে সহায়তা করেছে। পরিবারের দাবিতে, সরকার এখন পর্যন্ত তাদের ৫-৬ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে। শহীদের পিতা ছৈয়দ নূর বলেন, “আমার আর কিছু দাবি নাই, ছেলের হত্যাকারীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় — এইটাই চাওয়া।”

তিনি আরও জানান, তার ছেলে সব হোটেল কাজ পারত, আরব যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। কবর জিয়ারতে আসেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দীন শাহীন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও ঈদগাঁও থানার ওসি মো. মছিউর রহমান। তারা শহীদের কবর জিয়ারত করেন, পরিবারকে নগদ আর্থিক অনুদান ও উপহার দেন।

শহীদের ভাই মুসলেম উদ্দিন ও পিতা ছৈয়দ নূর বলেন, “আমরা আমাদের জীবদ্দশায় দেখতে চাই — ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশের উপযুক্ত বিচার। এ শহীদ যেন অযথা না যায়।”

Post a Comment

0 Comments