সাদ ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাংলা মাধ্যমে পড়ত। স্কুলটাই ছিল তার প্রিয় জায়গা—বন্ধুরা ছিল আনন্দের উৎস। রোববার ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় স্কুলে যেতে পারেনি সাদ। কিন্তু পরদিন সোমবার কান্নাকাটি করে স্কুলে গিয়েছিল সে। কে জানত, সেই যাওয়াটাই হবে তার জীবনের শেষ যাত্রা।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার দুপুরে। দুপুরের খাবারের বিরতিতে যখন শিশুরা ক্যান্টিনে ছিল, তখনই আছড়ে পড়ে একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিধ্বস্ত বিমানটি সাদের শ্রেণিকক্ষেই পড়ে। মুহূর্তেই আগুনে ঝলসে যায় ছোট্ট সাদসহ তার একঝাঁক সহপাঠী। মৃত্যু হয় অনেকের।
সাদের পরিবার থাকে ঢাকার দিয়াবাড়িতে। তার দাদা ও নানাবাড়ি মুন্সিগঞ্জে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় পরিবারের দৌড়ঝাঁপ। প্রথমে বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটেন তাঁরা। চার ঘণ্টা পর সিএমএইচের মর্গে পাওয়া যায় এক শিশুর মরদেহ। শিশুর ফুফা আবু সাঈদ মিলন প্রথম সেখানে গিয়ে জানেন, কেবল বাবা-মাকেই লাশ শনাক্ত করার অনুমতি আছে। এরপর বাবা মুকুলকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন মর্গ কর্তৃপক্ষ জানতে চায়—মরদেহের পরনে কী ছিল। বাবা বলেন—“লাল ঘড়ি, নেভি ব্লু প্যান্ট।” মরদেহে মিললো সেই পোশাক, সেই ঘড়ি। নিশ্চিত হয়ে বাবার বুক ভেঙে যায়।
ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাতে লাশ হস্তান্তর করে সিএমএইচ। রাত ১১টার দিকে মিরপুর সাড়ে ১০ নম্বর কবরস্থানে দাফন করা হয় সাদকে—সেই কবরেই ঘুমিয়ে আছেন তার দাদাও।
সাদের বাবা সালাহউদ্দিন বলেন,
“প্রশিক্ষণ বিমান লোকালয়ে কেন উড়ল? আমার ছেলেকে কে ফিরিয়ে দেবে? কারা দায়ী, তাদের বিচার চাই। আপনারা যদি সত্যিকারের সাংবাদিক হন, গল্প লেখার বদলে দায়ীদের নাম লিখুন, তাদের বিচার নিশ্চিত করুন। তখন বুঝব—আপনারা কিছু করেছেন।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার ছেলের ক্লাসের একজন চিপস কিনতে বের হয়েছিল, আরেকজন খাবার খেতে বের হয়েছিল—ওদের ছাড়া কেউ বাঁচেনি। স্কুলে গিয়েই বুঝে গেছি, আমার ছেলে নেই। মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে। অনেক শিশু ছাই হয়ে গেছে। তারা শহীদ, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে।”
এই বাবার কান্না শুধু এক শিশুর জন্য নয়—এটা রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহির দাবি।
0 Comments