দুবাই থেকে ফেরত খুনি মহসিন! নরসিংদী হত্যা মামলায় নাটকীয় অগ্রগতি

সিবি ডেক্স: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মহসিন মিয়াকে অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ পুলিশ। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতায় দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। ইতোমধ্যে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পিবিআই।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) পিবিআই নরসিংদী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। পিবিআই-এর দাবি, এই মামলায় মোট ১৭ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সকালবেলা নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করার ৯৪ দিন পর মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার দুদিন পর নিহতের ছেলে আমিনুর রশিদ খান শিবপুর থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ও ১০–১২ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ এক চক্রান্তের চিত্র। ঘটনার আগের রাতেই বিদেশি নম্বর থেকে হারুনুর রশিদকে ফোন করে জানানো হয়, মসজিদের অনুদান দিতে পরদিন সকালে মহসিন মিয়া বাসায় আসবেন। যেমন বলা হয়েছিল, ভোরবেলা মহসিন দুই সহযোগীসহ চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান এবং তাঁকে বাসার তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। কথাবার্তার ফাঁকে ফল আনার নাম করে একজন শুটার আচমকাই কোমরে গুলি চালায়—আরেকজন সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার করে। হামলার পর তারা পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, গুলি চালানোর পর মোটরসাইকেলে করে পালায় হামলাকারীরা। তবে কিছুদূর গিয়ে মোটরসাইকেল ফেলে দিয়ে প্রাইভেটকারে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায় মহসিন ও তার সহযোগীরা। সেখান থেকে সরাসরি চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

ঘটনার পরপরই গাড়িচালক নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। ইন্টারপোলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়—মহসিন, আরিফ ও হুমায়ুন তখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এরপর রেড নোটিশ জারি করে ২১ মে মহসিনকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল দুবাই গিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর ২০ জুলাই তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, “দীর্ঘ তদন্ত ও আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার ফলেই একজন গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। মহসিনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মামলার গতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।”

Post a Comment

0 Comments