কক্সবাজার সৈকতে রেকর্ড পর্যটক

সিবি ডেক্স: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণি পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে পর্যটকের স্রোত দেখা গেছে। বালিয়াড়ি আর মানুষের ভিড়ে সৈকত একাকার হয়ে যায়। সৈকতে ঠিক কত পর্যটক রয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সৈকতের ব্যবসায়ীরা জানান, এ ভিড় শুধু বিকেলের নয়; সকাল থেকেই টানা জনস্রোতে মুখরিত ছিল সমুদ্রসৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা। সৈকতের পাশাপাশি কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকা, পর্যটন জোন ও বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেখা গেছে মানুষের ঢল। এতে সড়কে তীব্র যানজটও তৈরি হয়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা, থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগে বড়দিনসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে বর্তমানে কক্সবাজারে দুই লাখের বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন, যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টে কোনো কক্ষ খালি নেই। ছোট ও মাঝারি হোটেল, গেস্টহাউজ ও কটেজগুলোর অধিকাংশ কক্ষও ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বুকড। জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল মিলিয়ে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতা রয়েছে।

হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক, ট্যুর অপারেটর, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আট দিনে অন্তত নয় লাখের বেশি পর্যটক সৈকতে আসবেন। এর আগের পাঁচ দিনে এসেছেন প্রায় চার লাখ পর্যটক। বছরের শেষ দশ দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ, শুঁটকি, মৎস্য, শামুক-ঝিনুকসহ ১৭টি খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শুক্রবার পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং ৩১ ডিসেম্বরও এক দিনে দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। সব মিলিয়ে সাত দিনে অন্তত নয় লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে গত সাত থেকে আট বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন হচ্ছে না; এবারও উন্মুক্ত কোনো আয়োজন নেই, তবে হোটেল ও রিসোর্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করবে।

শুক্রবার লাবণি পয়েন্টে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার পর্যটক দেখা গেছে। কলাতলী সৈকতে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার এবং সিগাল-লাবণী পয়েন্টে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পর্যটক। পর্যটকেরা জানান, বড়দিনের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেকেই বাড়তি এক দিনের ছুটি নিয়ে ভ্রমণে এসেছেন।

সৈকতে দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, শুক্রবার শহরের পাঁচ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের সমাগম ছিল। নিরাপত্তায় ২৬ জন লাইফগার্ড দায়িত্ব পালন করছেন।

সিলেট থেকে আসা পর্যটক হাসনাত শরীফ বলেন, কক্সবাজার তার প্রিয় জায়গা; পরিবার নিয়ে এসে সমুদ্র ও পাহাড় মিলিয়ে মন ভালো করার পরিবেশ পেয়েছেন। ঢাকা থেকে আসা হায়দার আলী জানান, অতিরিক্ত ভিড়ে কিছুটা হতাশ হলেও পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কেটেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা ও হয়রানি প্রতিরোধে নিয়মিত মনিটরিং চলছে জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তাই তাদের প্রথম অগ্রাধিকার এবং হয়রানি দমনে নিরলসভাবে কাজ চলছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতের কোনো উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট বা অনুষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ। তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি তারকা হোটেলে কনসার্টের আয়োজন হচ্ছে, সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। শান্তিপূর্ণ আয়োজন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করেছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments