উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পৌষের তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলেও জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে ফসলের মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকরা।
কাকডাকা ভোর থেকেই হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে মাঠে নেমে পড়ছেন দিনমজুররা। শুধুমাত্র দুমুঠো আহারের তাগিদে তারা ভুট্টা, আলু ও শাক-সবজির জমিতে নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ কেউ আবার আমন ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, তীব্র শীত ও কুয়াশা কিছু ফসলের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত কুয়াশা ও সম্ভাব্য শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু, সরিষা ও বোরো বীজতলায় ‘লেট ব্লাইট’ বা পচন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
উপজেলার পানিমাছকুটি এলাকার নারী কৃষি শ্রমিক জুহুরা জান্নাতি ও সখিনা বেগম বলেন, কাজ না করলে চুলা জ্বলার উপায় নেই। শীতের কারণে ঘরে বসে থাকার সুযোগ তাদের নেই। প্রতিদিন দিনমজুরির কাজ করেই তাদের সংসার চলে।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গজেরকুটি এলাকার কৃষি শ্রমিক বিদেশি চন্দ্র রায় এবং পূর্ব ফুলমতি এলাকার কৃষি শ্রমিক জয়নাল জানান, চার দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত-পা কাঁপলেও কাজ বন্ধ রাখলে সংসার চলবে না। তাই ঠান্ডা উপেক্ষা করেই মাঠে কাজ করতে হচ্ছে।
চন্দ্রখানা গ্রামের ভুট্টা চাষি হাসান আলী জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা রোপণ করেছেন। তীব্র শীতের কারণে ফসল রক্ষায় নিড়ানি দেওয়া হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে তিন বিঘা জমিতে হেমের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। ঠান্ডার প্রকোপ কমলে হালকা সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার সকাল ছয়টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন শীত ও কুয়াশার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলায় ভুট্টা ২ হাজার ২০০ হেক্টর, গম ১৫০ হেক্টর, সরিষা ৩ হাজার ৫০৫ হেক্টর, আলু ৫৫০ হেক্টর ও বোরো বীজতলা ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এসব ফসলের বিশেষ যত্ন নিতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং কোনো রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
0 Comments