অনোমা তন্বীর মৃত্যু: আত্মহত্যা নাকি হত্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা অনোমা বড়ুয়া তন্বীর অকাল মৃত্যু ঘিরে গভীর প্রশ্ন ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। স্বামীর দাবি—তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহতের পরিবার বলছে, এটি আত্মহত্যা নয়; বরং পারিবারিক সহিংসতার পর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে এখনো অপেক্ষা করা হচ্ছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্তের অগ্রগতির।

১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে জন্ম অনোমা বড়ুয়া তন্বীর। বাবা ধনিরাম বড়ুয়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, লেখক ও গবেষক এবং মা চন্দনা বড়ুয়া একজন শিক্ষিকা। চার ভাই–বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। শিক্ষাজীবনে ধারাবাহিক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি।

২০১১ সালে রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ–৫ অর্জন করেন অনোমা। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—উভয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল শাখায় ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আশীষ বড়ুয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঢাকার সবুজবাগ থানার মায়াকানন মসজিদ গলির একটি ভাড়া বাসায় দাম্পত্য জীবন শুরু করেন তাঁরা। নিহতের পরিবারের দাবি, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়। অনোমার ওপর মানসিক চাপ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর আগের কয়েক সপ্তাহে কলহের মাত্রা বেড়ে যায়।

২০২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর অনোমা বড়ুয়া তন্বীর মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো হয়। স্বামী আশীষ বড়ুয়ার দাবি অনুযায়ী, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার সময় বাসায় পরিবারের অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পরদিন, ২১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের রামুতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

তবে শেষকৃত্যের পর পরিবারের সন্দেহ আরও গভীর হয়। পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকা কিছু ছবিতে অনোমার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় বলে দাবি করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হতে পারে এবং পরে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

নিহতের বড় বোন অনন্যা বড়ুয়া শান্তা বলেন, তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চান এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন ছাড়া পরিবার শান্তি পাবে না।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন। সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা বলছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পরিবারের অভিযোগ ও উপস্থাপিত আলামতও তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহপাঠী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অনোমা বড়ুয়া তন্বীর মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির দাবি জানিয়েছে। একজন উচ্চশিক্ষিত ও কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত তরুণীর এই আকস্মিক মৃত্যু নারী নিরাপত্তা ও দাম্পত্য সহিংসতার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এনেছে।

Post a Comment

0 Comments