হাদি হত্যা: গ্রেপ্তার গুজব নাকচ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, এই সংক্রান্ত খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

এর আগে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাবি করেন, হাদি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখকে সহায়তার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ২৮ ডিসেম্বর পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। তবে এসটিএফ তাদের অফিসিয়াল পোস্টে এ তথ্য সরাসরি অস্বীকার করে।

এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু পোস্ট নজরে এসেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক একটি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে প্রতিবেশী দেশের কয়েকজন নাগরিককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

এদিকে, এর আগের দিন রোববার বাংলাদেশ পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই সন্দেহভাজন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে। তবে এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে মেঘালয় পুলিশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ পুলিশের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে বর্তমানে মেঘালয়ে অবস্থান করছেন—বাংলাদেশ পুলিশের এমন দাবি মেঘালয় পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ‘অসত্য’ ও ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।

মেঘালয় পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি এবং অভিযুক্তদের কাউকেই গারো পাহাড় এলাকায় শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এর আগে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার দিনই হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ ওরফে রাহুল এবং মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখকে শনাক্ত করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকার আমিনবাজার হয়ে মানিকগঞ্জের কালামপুরে যান। সেখান থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছে সীমান্ত অতিক্রম করেন। হালুয়াঘাটের আগে মুন ফিলিং স্টেশনে ফিলিপ ও সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পরে ফিলিপ তাদের ভারতে নিয়ে গিয়ে পুত্তি নামের এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন। পুত্তি ট্যাক্সিচালক সামীর মাধ্যমে তাদের মেঘালয়ের তুরা এলাকায় পাঠান।

তবে মেঘালয় পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এসব দাবির বিপরীতে বলেন, সীমান্ত পারাপার, পুত্তি কিংবা সামীর ভূমিকা নিয়ে কোনো গোয়েন্দা তথ্য, মাঠপর্যায়ের যাচাই কিংবা কার্যকর প্রমাণ নেই। রাজ্যের কোথাও পুত্তি বা সামীকে শনাক্ত, খুঁজে বের করা কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই এই বর্ণনা তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে মেঘালয় পুলিশ।

Post a Comment

0 Comments