বাঁকখালী উচ্ছেদে বিক্ষোভ, অচল কক্সবাজার শহর

সিবি ডেক্স: বাঁকখালী নদীর জায়গা উদ্ধারে কক্সবাজার শহরে চলমান জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে শহর। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) অভিযানের পঞ্চম দিনে সকাল ৯টার কিছু পর থেকে শহরের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের হাজারো বাসিন্দা গুমগাছতলায় বিমানবন্দর সড়কের অভিমুখে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

সকাল ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযানে ব্যবহৃত একটি এস্কেভেটর ভাঙচুর করে। এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরে তারা। পরিস্থিতি প্রায় দুই ঘণ্টা অচল থাকার পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও আশ্বাসে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। তবে এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, নদী উদ্ধারের নামে তাদের ভিটেমাটি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নুনিয়ার ছড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৪৫) বলেন, “নদীর জন্য জায়গা ছাড়তে রাজি আছি, কিন্তু আইন না মেনে গণ উচ্ছেদ চলছে আমাদের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও। জীবন দেব, তবু ঘর ছাড়ব না।”

এ সময় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায় আমরা মানি। তবে সেখানে কী বলা হয়েছে তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। প্রশাসন আগে নদীর সীমানা নির্ধারণ করুক, পুনর্বাসন ছাড়া এভাবে উচ্ছেদ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

অন্যদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক একে এম আরিফ উদ্দিন সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে যান।

জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ছোট-বড় স্থাপনা উচ্ছেদ করে অন্তত ৫৮ একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে কস্তুরাঘাট এলাকায় অভিযানের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, এ ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তৃতীয় দিনে পেশকার পাড়ায় স্থানীয়দের বাধায় উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪ শতাধিক জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা দখলদারদের তালিকা করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ৩০ আগস্ট নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন কক্সবাজারে এসে সংশ্লিষ্টদের তালিকা প্রণয়ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন।

Post a Comment

0 Comments