সিবি ডেক্স: চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে স্মৃতি হারিয়েছেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার তরুণ ইমরান হোসেন। প্রাণে বেঁচে গেলেও চিকিৎসকদের ভাষায় তার মাথায় স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে লোহার নাটবল্টু। এখন তিনি নিস্পৃহভাবে তাকিয়ে থাকেন, বলেন অস্পষ্ট কথা—মনে নেই কোনো অতীত স্মৃতি।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বিকেলে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় চলমান ছাত্র আন্দোলনের সময় হঠাৎ এক ভবনের ছাদ থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ। তখনই মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি এই তরুণ।
ইমরান হোসেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মধ্য তারতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা বিল্লাল হোসেন একজন অটোরিকশাচালক। ইমরান নিজেও নিজ গ্রামে একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু সেই আয়ে সংসার না চলায় চাকরির খোঁজে ঢাকার আশুলিয়ায় যান। যোগদানের মাত্র দুই মাসের মাথায় ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
ইমরানের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘সেই রাতটা আমরা শুধু কেঁদেই কাটাই। ভোরে রওনা দিয়ে অনেক কষ্টে রাতে ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছাই। চারদিকে গুলির শব্দ, লাশ আর লাশ। বহু খোঁজাখুঁজির পর দেখি, ছেলের মাথার খুলি খুলে ল্যাবে রাখা, পরে আবার অপারেশন করে লাগানো হয়েছে। মাথায় নাটবল্টু বসানো হয়েছে।’
মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘ছেলে এখন পাগলের মতো। শুধু খাওয়ার সময় খাবারের কথা বলতে পারে। নামাজে যায় ঠিকই, কিন্তু বুঝে না কিছু। উল্টোপাল্টা কথা বলে। আমরা আশা করি, ভালো চিকিৎসা পেলে ছেলে আগের মতো হয়ে যাবে।’
তবে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ চিকিৎসা ব্যয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, ‘আন্দোলনে আহতদের নিয়ে প্রশাসন সবসময় খোঁজখবর রাখছে এবং আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু ইমরানের পরিবার বলছে, তাতে প্রয়োজনের সামান্যই মেটে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।
স্মৃতি হারিয়ে পাথর হয়ে যাওয়া এক তরুণের এই করুণ বাস্তবতা আজ রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সমাজের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
0 Comments