রংপুরে ব্লকেডের হুঁশিয়ারি, কেন মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে না?

সিবি ডেক্স: "ক্ষমতায় বসে মামলার আদেশ দিতে পারলে, শহীদ মাহিনের মামলাও তুলে নিন"—জুলাইযোদ্ধা রনি তালুকতার এই বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে রংপুর। শহীদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারীদের মামলাগুলো এখনো প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা জুলাই আন্দোলনপন্থী জনতা।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রংপুর শিল্পকলা একাডেমি হলরুমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রশাসনের প্রতি ছিল তীব্র প্রতিবাদ ও অসন্তোষ।

মূল অভিযোগগুলো হলো:

শহীদ পরিবার ও আহতদের করা মামলায় অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

আহতদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, বরং আন্দোলনে অংশ নিলে চিকিৎসকদের তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হচ্ছে।

সরকারপ্রধানের মামলা-কর মওকুফ নির্বাহী আদেশে হলেও সাধারণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো বহাল রয়ে গেছে।

জাতীয় সংগীত ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করায় আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা।

অনুষ্ঠানে একপর্যায়ে রনি তালুকতার মঞ্চে ডেকে আনা হয় মাহিন নামে এক কিশোরকে, যিনি এখনো মামলার আসামি। রনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব নিজের ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ করে নিলেন, নিজের মামলাগুলো তুলে নিলেন। অথচ মাহিন এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরছে।” তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে মামলাটি প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়ে ঘোষণা করেন, “না হলে রংপুর ব্লকেড হবে।”

পাশাপাশি, শহীদ সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার মেয়েটা বাবাকে দেখতে চায় ঘুমানোর আগে। আমি বলতে পারি না—ওর বাবা নেই। আমি তার কবর দেখতে গেলেও মার খাই। আমি নিরাপত্তা চাই।”

শহীদ মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলেন, “আমরা যেটা হারালাম, সেটা আর ফিরে পাব না। আমাদের কোনো মর্যাদা নেই, কোনো ছাতা নেই মাথার ওপর।”

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও নীরবতা পালন ছাড়া সরাসরি আলোচনা শুরু করায় বিক্ষোভ হয়। পরে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচিটি সম্পন্ন করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের নামে বরাদ্দ এলেও রংপুর বারবার বঞ্চিত। এক বছরে রংপুরে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রকল্প বা বাজেট আসেনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার জন্যও প্রশাসনকে তীব্র সমালোচনা করেন তারা।

এর আগে সকাল ৯টায় শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই, সহযোদ্ধারা ও জেলা প্রশাসক ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম ও বাবা মকবুল হোসেন।

রংপুরের হুঁশিয়ারি এবার রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

Post a Comment

0 Comments