পণ্য ট্রেন নেই, ক্ষতির পথে কক্সবাজার রেল!

সিবি ডেক্স: দেড় বছর পার, নেই পণ্যবাহী ট্রেন—ঘাটতি পড়ছে আয় ও সম্ভাবনায়।

দেড় বছর আগে চালু হওয়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ দিয়ে এখনো একটি পণ্যবাহী ট্রেনও চালু হয়নি। ১১ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে বলা হয়েছিল, শুধু যাত্রী নয়—মৎস্য, কৃষি, লবণ ও বনজ পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে রেলওয়ে বছরে ৫০ কোটি টাকা আয় করবে। বাস্তবে, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চারটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলেও তাতে পণ্য পরিবহনের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে করে কক্সবাজার রেলপথের পূর্ণ সুফল মিলছে না।

ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই পণ্যবাহী ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরু মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজারের মতো গাড়ি চলাচল করে, যেটা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ট্রেন চালু হলে এই চাপ কমবে এবং দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে।

রেলওয়ের ভেতরে মতভেদ স্পষ্ট। বাণিজ্যিক বিভাগ বলছে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখনো পণ্য পরিবহনের কোনো চাহিদা আসেনি এবং ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন ট্রেন চালানোও কঠিন। অন্যদিকে প্রকৌশল বিভাগ মনে করে, চাহিদা আছে—উদ্যোগ নিলে সাড়া মিলবে। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সবুক্তগীনও এই মতের পক্ষে। তিনি জানান, অন্তত দুটি লাগেজ ভ্যান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা মাসিক সভায় তোলা হবে।

এদিকে, প্রকল্পের লক্ষ্য ও অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। যাত্রী পরিবহনে প্রথম বছরেই ৩৯২ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হলেও আয় হয়েছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা। পণ্যবাহী ট্রেন না থাকায় আরও ৫০ কোটি টাকার সম্ভাব্য আয় হাতছাড়া হয়েছে।

অথচ কক্সবাজারে পণ্য পরিবহনের সম্ভাবনা অপার। এই জেলার উৎপাদিত ২২.৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ সারা দেশে সরবরাহ করা হয় ট্রাকে করে, যা সড়ক পিচ্ছিল করে তোলে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। ঈদুল ফিতরে দুই দিনে লোহাগাড়ায় ১৬ জনের মৃত্যুর পেছনেও এই কারণ অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

মৎস্য খাতে কক্সবাজার বছরে উৎপাদন করে ২.৪৯ লাখ মেট্রিক টন মাছ, যার বড় অংশ চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যায়। এ ছাড়া শুঁটকি ও সুপারি খাতও উল্লেখযোগ্য। ৮ হাজার ৬৪৫ একর জমিতে উৎপাদিত হয় প্রায় ১২,৯৬৭ মেট্রিক টন সুপারি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা। এসব পণ্য ট্রেনে পরিবহন করা গেলে খরচ কমতো, দুর্ঘটনা কমতো, আয় বাড়তো।

শীতকালে উৎপাদিত সবজিও ট্রাকে করে বাইরে পাঠাতে হয়। কৃষকেরা মনে করছেন, রেলে পরিবহন চালু হলে তাঁদের আয় বাড়বে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানান, রেল চালুর শুরু থেকেই তাঁরা পণ্যবাহী ট্রেন অথবা যাত্রীবাহী ট্রেনে পণ্যবাহী কোচ সংযুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এখনো সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়, তবে কক্সবাজার ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য তা হবে ইতিবাচক।

Post a Comment

0 Comments