এক সময়ের পরিচ্ছন্ন ও স্বস্তির পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন ক্রমেই ভয়াবহ যানজটের শহরে পরিণত হচ্ছে। সাগর ও নদীবেষ্টিত এই শহরের আয়তন প্রায় ৩৩ বর্গকিলোমিটার হলেও প্রধান সড়ক ও পর্যটন জোন মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র আট কিলোমিটার। অথচ এই সীমিত সড়ক ব্যবস্থার ওপর দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে বৈধ ও অবৈধ হাজার হাজার টমটম, মিশুক, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মিনিবাস ও মোটরসাইকেল।
নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া টমটমের লাগামহীন চলাচল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলি পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। ফুটপাত দখল করে হকার বসানো, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতায় যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা মোড়, শপিং কমপ্লেক্স এলাকা ও বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কগুলোতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক চাপ ও শারীরিক ভোগান্তি। ব্যবসায়ী, পর্যটক, শিক্ষার্থী ও রোগী—কেউই এই দুর্ভোগের বাইরে নন। সময়মতো স্কুল-কলেজ বা হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, টমটম লাইসেন্স প্রদানকে ঘিরে সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা, ফুটপাত দখল এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণেই এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। রাজনৈতিক ও নাগরিক প্রতিনিধিরাও বলছেন, পরিকল্পিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, যানজট নিরসনে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ যানবাহন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে। তবে শহরবাসীর দাবি, কেবল আশ্বাস নয়—এখন প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত। যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, টমটমের রুট নির্ধারণ, ফুটপাত উচ্ছেদ ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সচেতন নাগরিকদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই সমুদ্রনগরী পুরোপুরি যানজটের নগরীতে রূপ নেবে।
0 Comments