মাতামুহুরী নদী দখলে অবৈধ মাছঘের

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রমত্তা মাতামুহুরী নদীর মাঝখানে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষের ঘের তৈরির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সাহারবিল বাটাখালী সেতুর নিচে নদী দখল করে এই আয়োজন করায় নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও জীববৈচিত্র্য।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মাতামুহুরী নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার চকরিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। দীর্ঘদিন ধরে দখল, দূষণ ও পলি জমে নদীটি নাব্যতা সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে নদীর মাঝখানে নতুন করে বাঁধ ও বেড়া স্থাপন করায় বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাহারবিলের সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ৩২ জনের একটি প্রভাবশালী চক্র নদী দখল করে মাছ চাষের এই আয়োজন করেছে। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি স্থানীয়দের। সরেজমিনে দেখা যায়, বাটাখালী সেতুর নিচে নদীর মাঝখানে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে একটি খুপড়িঘরও স্থাপন করা হয়েছে।

নদীপাড়ের বাটাখালী জলদাশপাড়ার জেলেরা জানান, চকরিয়া পৌরসভা ও সাহারবিল এলাকায় প্রায় ৪০০ জেলে পরিবার মাতামুহুরী নদী ও খাল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রের দখলদারত্বের কারণে তারা এখন নদীতে যেতে আতঙ্কিত। স্থানীয় জেলে রবি জলদাশ বলেন, এভাবে নদী দখল চলতে থাকলে জেলেদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

অভিযোগ অস্বীকার করে দখল প্রক্রিয়ায় যুক্ত আবু জাফর বলেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য নদীর একপাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে এবং এতে নদীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিমও দাবি করেন, রাবার ড্যাম ফোলানোর কারণে পানি বাড়লে তারা সাময়িকভাবে মাছ চাষ করবেন, নদী দখলের উদ্দেশ্য নেই।

তবে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল আমিন বলেন, নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীন দেলোয়ার জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments