কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়া ৩৭টি পরিবারের মাঝে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। হাত-পা হারানো, আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ কিংবা এক দুর্ঘটনায় পরিবারের একাধিক সদস্য হারানোর মতো হৃদয়বিদারক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। কর্তৃপক্ষের আশা, এই অনুদানের অর্থ আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নতুন করে জীবন গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান (উপসচিব) আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহম্মেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসেন সজিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিআরটিএ পরিচালক মো. মাসুদ আলম, সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান, কক্সবাজার সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, সিভিল সার্জন প্রতিনিধি ডা. মহিউদ্দীন মো. আলমগীর, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী, শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আবুসহ সংশ্লিষ্টরা। বক্তব্য দেন আহত ও নিহত পরিবারের স্বজনরাও।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে যাত্রী, পথচারী, চালক ও হেলফার পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। আহত পরিবারের সদস্যদের সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা এবং নিহত পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম–কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী ঢালা এলাকায় মারছা পরিবহন ও একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ফারজানা মজুমদার, রুমেনা বেগম ওরফে রুমি, সাদিয়া হক, ফারহানা মজুমদার ও রিজোয়ানা ইসলাম নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত ছয় পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
অনুদানের চেক গ্রহণ করে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, প্রিয়জন হারানোর শোক পূরণ হওয়ার নয়, তবে এই সহায়তা চিকিৎসা ও জীবন পরিচালনায় কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো সরকারের একটি মানবিক দায়িত্ব, যা তাদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
0 Comments