ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পাওয়ার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও দেশের বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক দেশে প্রবেশ করলেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেনি। আমদানির খবরে স্বস্তির যে প্রত্যাশা ছিল ভোক্তাদের, তা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। পুরনো দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এমনকি নতুন ওঠা দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ টাকা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ শুল্ক ও পরিবহন খরচ যুক্ত হলেও খুচরা বাজারে এত বড় মূল্য ব্যবধানের কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখনো কম। খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক জানান, দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ে। আমদানি উন্মুক্ত হলেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে না আসায় দাম কমছে না। তিনি আরও বলেন, একবার দাম ১৫০ টাকায় উঠে গেলে তা কমার গতি খুব ধীর হয়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকারকদের একটি অংশ পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছে না। বাজারে বিভিন্ন মানের পেঁয়াজ থাকলেও ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের কাছাকাছি রাখা হচ্ছে। এতে বাজারে কাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে দেশে এসেছে মাত্র তিন হাজার টন। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ আসতে সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ পরিবহন মিলিয়ে চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিদিন ২০০টি করে আইপি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, সবজির ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্য তাদের জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বাজারগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, আমদানির সুফল মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতেই আটকে যাচ্ছে, কার্যকর বাজার তদারকি না থাকায় সাধারণ মানুষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
0 Comments