সাগরে থামছে না সিমেন্ট পাচার!

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় নিয়মিত অভিযান, বোট জব্দ ও পাচারকারী আটক সত্ত্বেও সাগর পথে মায়ানমারে সিমেন্ট পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারের কৌশল আরও সংগঠিত ও ভয়ংকর হয়ে উঠছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

সম্প্রতি কুতুবদিয়া বহিঃনোঙর এলাকা থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১ হাজার ৭৫০ বস্তা সিমেন্টসহ দুটি বোট এবং ২৩ জন পাচারকারীকে আটক করে। এ ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে সাগর পথে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি শক্তিশালী সিমেন্ট পাচার নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব। এর আগেও একাধিকবার পাচারকারীদের বোটসহ আটক করা হলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আইনের ফাঁকফোকরে পার পেয়ে চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিন সংলগ্ন সাগর এলাকা সিমেন্ট পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশীয় বাজারে স্বল্প দামে কেনা সিমেন্ট রাতের আঁধারে ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটে তুলে মায়ানমারের বিভিন্ন উপকূলে পাচার করা হয়। এতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পাচারকারীরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্গম সমুদ্রপথ ও সীমিত নজরদারি পাচারকারীদের বড় সুবিধা দিচ্ছে। স্থানীয় সহযোগী ও তথ্যদাতা চক্র অনেক ক্ষেত্রে অভিযানের আগেই পাচারকারীদের সতর্ক করে দেয়। আবার বৈধ মালামালের আড়ালে অবৈধ সিমেন্ট পাচারের ঘটনাও ঘটছে, যা শনাক্ত করা কঠিন। জব্দ হলেও অনেক পাচারকারী সহজেই জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

একাধিক স্থানীয় জেলে জানান, কিছু বোট নিয়মিত একই রুটে চলাচল করলেও রহস্যজনকভাবে দীর্ঘ সময় তারা ধরা পড়ে না। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিমেন্ট পাচার শুধু রাজস্ব ক্ষতির বিষয় নয়; এটি সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় হুমকি। ভবিষ্যতে এই পাচার চক্রের সঙ্গে মাদক বা অস্ত্র পাচারের মতো আরও ভয়াবহ অপরাধ যুক্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, সমুদ্র এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান আরও বাড়ানো হবে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু অভিযান নয়—পাচারের অর্থনৈতিক উৎস, স্থানীয় সহযোগী এবং আইনি দুর্বলতা চিহ্নিত করে সমন্বিত ব্যবস্থা না নিলে সাগর পথে সিমেন্টসহ অন্যান্য অবৈধ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিনই থেকে যাবে।

সামুদ্রিক সীমান্তে এই অব্যাহত পাচার এখন কেবল আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়; এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে—যার কার্যকর সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

Post a Comment

0 Comments