সমুদ্র কখনো নীরব থাকে না—সে আহ্বান জানায়, ছুড়ে দেয় চ্যালেঞ্জ। আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সাহস, দৃঢ়তা আর মানসিক শক্তির অনন্য সম্মিলন ঘটালেন দেশের সেরা পাঁচ সাঁতারু। কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ চ্যানেলে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী সাঁতার প্রতিযোগিতা, যেখানে নীল জলরাশির বুকে আঁকা হয় ১২ কিলোমিটারের দুঃসাহসিক যাত্রা।
সকাল ১১টার দিকে একে একে সাঁতারুরা ঝাঁপিয়ে পড়েন স্রোতের বিপরীতে। সূর্যের স্নিগ্ধ আলো আর বাতাসের ছোঁয়ায় উত্তাল সমুদ্র হয়ে ওঠে জীবন্ত প্রতিপক্ষ। গন্তব্য ছিল সোনাদিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের লোনাজল পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সমুদ্র পয়েন্ট। এই প্রতিযোগিতা ছিল কেবল সময় বা দূরত্বের নয়, ছিল নিজেকে জয় করার এক অদৃশ্য লড়াই।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ তরুণ, কেউ অভিজ্ঞ। বিশেষভাবে নজর কাড়েন বাংলা চ্যানেল জয়ী তরুণী সাঁতারু সোহাগী আক্তার। গাইবান্ধার এই কন্যা টানা প্রায় তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটে আবারও নিজের নাম লেখান সমুদ্র জয়ের গল্পে। ঢেউয়ের সঙ্গে নিশ্বাসে নিশ্বাসে এগিয়ে চলা এই যাত্রায় কেউ ক্লান্ত হয়েছেন, কেউ আবার কিছুক্ষণ জলে ভেসে শক্তি সঞ্চয় করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে গেছেন।
শেষপর্যন্ত যখন সাঁতারুদের হাত ছুঁয়েছে কলাতলী বীচ পয়েন্টের বালুচর, তখন তারা শুধু বিজয়ী নন—তারা সাহস আর দৃঢ়তার প্রতীক। আয়োজকদের ভাষায়, এই চ্যালেঞ্জিং প্রতিযোগিতা কেবল শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নয়, এটি মননের এক বিস্তৃত দিগন্ত উন্মোচন।
প্রতিযোগিতা শেষে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়াশ ট্রেনিং সেন্টারে অংশগ্রহণকারী সাঁতারুদের পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের যুগ্ম সচিব ও ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক মোঃ মাহবুবুর রহমান। জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতা করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ক্রীড়া পরিদপ্তর।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) এস আই এম ফেরদৌউস আলম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব ও ক্রীড়া অফিসার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মনজুর আলম, লিডার ওব এসিস্ট ক্রু ও হেড অব জাজেস ডি এম ওজায়ের হোসেন, সমাজসেবক বখতিয়ার হোসাইন এবং বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) কক্সবাজার শাখার সদস্য সচিব আহসান সুমনসহ সংশ্লিষ্টরা।
পরে বগুড়ার মোঃ রাব্বী রহমান, রাঙ্গামাটির হাফিজুর রহমান ও জয়তু দাশ এবং গাইবান্ধার সোহাগী আক্তারকে সফলভাবে নতুন চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
0 Comments