কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এলাকায় শত বছরের একটি কবরস্থান দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি চিহ্নিত দখলবাজ চক্র—এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কবরস্থান দখল পাকাপোক্ত করতে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তাদের দাবি। এ মামলায় সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্ব ধেছুয়াপালং আল হাসান মসজিদের সংলগ্ন একটি বৃহৎ ও প্রাচীন কবরস্থান দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি ওই কবরস্থানের ওপর দৃষ্টি পড়ে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম ফরিদ, তাঁর ভাই এস এম জসিম ও জয়নাল আবেদীনসহ একটি গোষ্ঠীর। তারা কবরস্থান দখলের চেষ্টা চালালে এলাকাবাসী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
প্রতিবাদের জেরে জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে সত্তরোর্ধ্ব এজাহার মিয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০–৩০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দাবি, কবরস্থান রক্ষায় প্রতিবাদ করা গ্রামবাসীদের এলাকা ছাড়া করতেই পরিকল্পিতভাবে এই সাজানো মামলা করা হয়েছে। তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থান দখলকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, একটি কবরস্থান দখলের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি বিএনপির ঘরানার লোকজনের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী এজাহার মিয়া জানান, দখলবাজ চক্র কবরস্থানের একটি অংশ দখল করে সেখানে বসতি স্থাপন করেছে এবং রোহিঙ্গাদের ভাড়া দিয়েছে। তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানালে ইউএনও ভূমি অফিসে প্রতিবেদন চান। পরে ভূমি কর্মকর্তা ওই জমিকে কবরস্থান ও জানাজার মাঠ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে কবরস্থানের জায়গায় তিন থেকে চারটি কাঁচা ঘর থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ সরেজমিন তদন্ত শেষে জানান, বিরোধপূর্ণ জমিটি দীর্ঘদিন ধরে কবরস্থান ও জানাজার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অন্যদিকে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম ফরিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিরোধপূর্ণ জমিটি তাঁর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়; বরং তাঁর চাচাতো ভাইদের দখলে থাকা সম্পত্তি। তাঁর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবার ওই জমি ভোগদখল করে আসছে এবং বর্তমানে জানাজার মাঠও সেখানে রয়েছে। তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দখলীয় জমিতে প্রবেশ, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী কবরস্থান উদ্ধারে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
0 Comments